বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন
স্নেহের বাবু, কাজী মোরশেদ আহমেদ বাবু।
আজ এমন একটি দিনে দাঁড়িয়েছি যখন কথা বলা খুব কষ্টের। আমার পূর্বের বক্তারা যখন স্মৃতিচারণ করছেন। আমি শুনছিলাম। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো জানি না। অনেক স্মৃতি বিস্মৃতি মাথার চারপাশে ঘিরে আছে।
বাবুর পিতা কক্সবাজারে আওয়ামী রাজনীতির নিবেদিত প্রাণ, আমাদের মুজিব আর্দশের কান্ডারিদের ভরসার স্থল তোফায়েল চাচা ও আমার পিতা নুরুল ইসলাম আওয়ামী রাজনীতি ও বাংলাদেশের রাজনীতির পট পরিবর্তন দেখেছেন। দলের দূর্দিন সুদিনেও নৌকার হাল ছাড়েন নি। আজও দল ক্ষমতায়। আর আমরা পঁচাত্তরে মুজিব হত্যার পরবর্তী আমাদের পিতারা মুজিবের আর্দশকে বাঁচাতে ও জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দিতে যে ওয়াদা করেছিলেন কাজী মোরশেদ আহমেদ বাবু মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সেই স্বপ্ন সাধ ও আর্দশের পথ থেকে এক চুল পরিমাণ আপোষ করেনি।
এখন ফাল্গুনের রোদ ফুরিয়ে আসছে। আজ বাবুর স্মৃতিতে কাঁদতে এই মাঠে এসে মিলেছে জনস্রোত ও জীবনের কলরোল। বিকেলের রোদ ভেঙে চলে গেছে বাবু আর কোনদিন এই মলিন শহরে ফিরবে না আমাদের প্রিয় বাবু, মৃত্যুর ছায়া তাঁর ওপর ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছিলো। কিন্তু বাবু সত্যি চলে যাবে এমনটা কখনোই ভাবতে চাইনি মন। কিন্তুু আজ বৃক্ষ থেকে ঝরে গেছে আমাদের প্রিয় ফুল, প্রস্থানে এই ভূমি হয়েছে নিষ্ফলা, হারিয়েছি ঘাসের চির সবুজ। আর আজ প্রাণ ফিরেছে মাটির কাছে মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক।
“এখনো এপারে আছি, চলে যাবো সুতোর ওপারে। সুতোর ওপারে সুখ, সম্ভবত স্বাধীনতা আছে।”
আজ সত্যিই বাবু আমাদের সবাইকে ফেলে কোথায় খুঁজে নিতে গেলো জীবনের অপার স্বাদ। জানি, সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না। শুধু জানি, প্রিয়জন চলে গেলে মনের ভেতরে গভীর বিষাদ জমে। মনে হয় পাখির ওড়ার কাল ফুরিয়েছে, ফুল ফুটে ওঠার প্রহরও শেষ। শুধু তাঁর অনুপস্থিতির বেদনা নিয়ে বয়ে চলেছে সময় তার আপন নিয়মে।
আজকের বৈষয়িক দুনিয়ায় সহজ,সরল, সাবলীল সাহসী বাবু কে চিনতে পারা খুব কঠিন।
করোনা ভাইরাসের লক ডাউন ও এর পরবর্তী এই এলাকার মানুষের নির্ভরতা ও বিশ্বাসের জায়গা হয়ে উঠেছিলো বাবু। অন্যান্য কাউন্সিলরের চেয়ে দ্বিগুন জনগনের কাছে প্রিয় ভাজন হয়ে উঠতে পারা অনেক বড় গুন। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের বিপদে সবার আগে হাজির বাবু। বাবু তারুণ্যের রাজনীতির আইডল। এই অল্প বয়সে জনগণ ও নিজ দলের কর্মী সর্মথক থেকে শুরু করে সব শ্রেণী পেশার মানুষের প্রিয়মুখ হয়ে উঠা কঠিন। কিন্তু সে তাই করে দেখিয়েছিলো।
বাবু হয়ে উঠেছিল সকলের নয়নের মণি। বাবুর তেজ ও সাহস আমাদের স্পর্ধা ও শক্তি দিয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবার।
“যে অধীন দিনে রাতে, বুলেটে যে বুক পাতে
সে বুঝেছে স্বাধীনতার মানে “
স্মৃতিতে ভাসছে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার দিন জননেতা মুজিব ভাই আর আমি মিলে যখন রামুর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছি তখনও আমাদের যাত্রা সঙ্গী বাবু।
আজ চারদিকে যখন দল ও দলের বাইরে ঘাপটি মেরে আছে স্বার্থন্বেষী মহল। যখন নবীন কর্মীদের এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ করতে, মুজিব আর্দশের দীক্ষা দিতে একজন অভিযাত্রীর প্রয়োজন ঠিক সেই সময়ে আমাদের সাথে বাবু নেই। এটুকু শূন্যতা পূরনের নয়।
এ যেন বিনা মেঘে বজ্রাঘাত। সকালের কুয়াশা কেটে রোদ ফুটতে শুরু করেছে। গতানুগতিক নানা বিষয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মনে জাগছে। আবার একই রকমভাবে মিলিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই হইতো বাবু ফোন দিয়ে উদার কন্ঠে ডেকে উঠবে। বাবু নেই তা আমি স্বীকার করতে চাই না।
বাবু আছে, বাবু থাকবে এই জনপদের দুঃখিনী মায়ের হাসিতে, অন্যেয়ের বিরুদ্ধে তারুণ্যের আপোষহীন কন্ঠে। মুজিব সৈনিকদের প্রতিটি মিছিলে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও সাধ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীর স্মৃতির মণিকোঠায়, চোখের জলে, বুকের ব্যাথায়।
আজ এই মাঠ থেকেই শপথ নিই বাবু আত্মার শান্তিতে আমরা প্রতিটি আওয়ামীলীগ কর্মী দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবো। মুজিব আর্দশের বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবো।
দলকে ভালোবাসবো । জনতা কে ভালোবাসবো। দেশ কে ভালোবাসবো।
প্রিয় বাবু লাল সবুজের মাটিতে ভালো থেকো।
মো. নজিবুল ইসলাম, সভাপতি, কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply